বছর শেষে বেকার হতে পারে ৫৫ লাখ চাকরিজীবী

বর্তমানে দেশে বেকার দুই কোটি ৪০ লাখ। ২০২১ সালের মধ্যে আরও ৫৫ লাখ মানুষ চাকরি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। এ হিসেবে বেকারের তালিকায় যুক্ত হতে পারে আরও ৫৫ লাখ। সম্প্রতি এটুআই, আইএফসি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইউএনডিপি, ডব্লিউ আর এফ, লংকাবাংলা, লাইট ক্যাস্টল ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

১১টি সেক্টরকে প্রাধান্য দিয়ে এ গবেষণা পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে উল্লেখ করা হয়, মহামারি কভিডের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসা। বড় ব্যবসায়ীরা কোনো মতে টিকে থাকলেও মুখ থুবড়ে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) খাত। মহামারিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত ৩৭ শতাংশ কর্মচারী কাজ হারিয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ৭০ শতাংশ কর্মীর চাকরি। অন্যদিকে বাধ্য হয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন ২১ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

কভিডের প্রথম ধাপে আর্থিক চাপ সামলাতে এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মে মাস পর্যন্ত ১৪ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকার বিতরণ করা হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, ৭৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের কাজ। তারপরও ক্ষতি সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সংক্রমণ রোধে একের পর এক লকডাউনের সময় বাড়ছে। এতে বিরাট ক্ষতিতে পড়েছে পুরো অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতিতে অভাবে পড়ে ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মন্দার বাজারে শত চেষ্টা করেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারছেন না তারা। সুসময়ের দিন গুনে এখন দিন পার করতে হচ্ছে তাদের। গবেষণা বলছে, বিক্রি কমে গেছে ৯৪ শতাংশ এসএমই ব্যবসায়ীর। ইতোমধ্যে প্রজেক্টে লস করেছেন শতকরা ৮৩ জন উদ্যোক্তা। ৩৩ শতাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না।

সরকারের দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজে এসএমই খাতের জন্য বরাদ্দ করা তিন হাজার কোটি টাকার মধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনকে দেয়া হয় ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সদ্যবিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ১০০ কোটি টাকা দেয়া হয়। বাকি ২০০ কোটি টাকা চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে ১১৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। প্রণোদনার বাইরে ১৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, কভিডের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এসএমই উদ্যোক্তাদের এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়ার কথা। এ ঋণের সুদের হার চার শতাংশ। দুই বছরে ২৪ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। গড়ে একজন গ্রাহক ঋণ পাচ্ছেন সাড়ে ৯ লাখ টাকার মতো।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আমানতের সুদহার এখন অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় কম। গত বছর এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেয় সরকার। এর আগেই ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমিয়ে আনতে শুরু করে। গত মে মাসে ব্যাংক খাতের আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪.১৪ শতাংশ। অন্যদিকে বর্তমানে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। ফলে ব্যাংকের পুঁজি ভেঙে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের প্রবণতাও লক্ষ্য করা গেছে।